বিস্তারিত
নেত্রকোণা জেলার উল্লেখযোগ্য প্রকৃতিক সম্পদ বিজয়পুরের সাদামাটি। ১৯৫৭ সালে ভূতত্ত্ব জরিপে দুর্গাপুর উপজেলা বাগাউড়া গ্রামে সর্বপ্রথম সাদা মাটির সন্ধান পাওয়া যায়। ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৫ সালে সরকারের খনিজ সম্পদ বিভাগ এ সাদামাটির পরিমান নির্ধারণের জন্য ১৩টি কূপ খনন করে। ১৯৭৫, ১৯৭৮,১৯৮০ ও ১৯৮৩, সালে সরকার ব্যাপক ভাবে ভূতাত্ত্বিক অনুসন্ধান চালায়। সন্ধান পায় পশ্চিমে ভেদীকুড়া থেকে পূর্বে গোপালপুর পর্যন্ত এলাকায় নিয়মিত ও অনিয়মিত স্তরে সাদামাটি । সাদামাটি এলাকাটির দৈর্ঘ্য ১৪ কিলোমিটার, প্রস্থে ৬শ মিটার । অধিকাংশ সাদামাটির টিলা ১৫ থেকে ৪০ মিটার পর্যন্ত উচু । ভূপৃষ্ট থেকে অবতল কোণের দিকে ৬০ মিটার গভীর পর্যন্ত সাদামাটির অস্থিত্ব রয়েছে । এ সাদামাটির বাংলাদেশের চাহিদার সিংহভাগ পুরণ করে চলছে।
চীনে এ মাটির সর্বপ্রথম ব্যবহার শুরু হয়েছিল বলে অনেকে এ সাদামাটিকে চীনা মাটিও বলে থাকে। এ সাদামাটিকে বিজয়পুর অঞ্চল থেকে উত্তোলন হয় বলে বাংলাদেশে বিজয়পুর কে বা বিজয়পুর সাদামাটি বলা হয়। এ মাটিকে সাদামাটি বলা হলেও এর রং হালকা ধূসর থেকে সাদাটে রঙের। একবারে সাদা বলা যাবেনা। কোন স্থানে এটি নানা রঙের সমন্বয় লক্ষ্যকরা যায়। কোন কোন স্থানে মসৃন, কোথাও খসখসে। শুকনো এ মাটি শক্ত ও ভঙ্গুর। ভেজালে আটালো ও নরম হয়ে যায়।
বিজয়পুরের সাদামাটি রাসায়নিক বিশ্লেষনে মৃত্তিকা বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করেছেন সিলিকন অক্রাইড দশমিক ৪ থেকে ৬৮ শতাংশ। টাইটনিয়াম অক্রাইড দশমিক ৪ থেকে ২ শতাংশ। ক্যালসিয়াম অক্রাইড সামান্য হতে ১ শতাংশ। ম্যাগানেসিয়াম অক্রাইড সামান্য হতে দশমিক ৮ শতাংশ। প্লাষ্টিসিটি ২০ শতাংশ। এ মাটির আপেকি ঘণত্ব ২.৫৫।
বাংলাদেশের পিপলস সিরামিক ইন্ডস্ট্রিজ, মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্টিজ, বেঙ্গল ফাইন সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ এ মাটি ব্যবহারে তৈজসপত্র তৈরি করে। বাংলাদেশ ইন্সুলেটর এন্ডস্যানিটরি ওয়্যার ফ্যাক্টরী এ মাটি দিয়ে বৈদ্যুতিক ইন্সুলেটর তৈরি করে।
লিখেছেন : আলী আহাম্মদ খান আইয়োব