(১) কমরেড মণিসিংহ :(জন্ম ৮জুলাই ১৯০১ খ্রীঃ) । কমরেড মণিসিংহ ছিলেন প্রখ্যাত রাজনীতিক,সমাজসেবী ও তৎকালীন ময়মনসিংহের কৃষক ও টংক আন্দোলনের প্রধান নেতা। তিনি ১৯২১ খ্রীঃ তৎকালীন বিপ্লবী সংগঠন “অনুশীলন” দলের সাথে যুক্ত হয়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন। ১৯২৫ সালে তিনি কউমিনিষ্ট পার্টিতে যোগদেন। ১৯৪৫ খ্রীস্টাব্দে এপ্রিল মাসের ৪ ও ৫ তারিখে নেত্রকোণার নাগরার মাঠে অনুষ্ঠিত সারা ভারত কৃষক সম্মেলনের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৪৬ খ্রীঃস্টাব্দে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য পদে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে ব্যার্থ হন। ১৯৩৭ সাল থেকে গারো পাহাড় অঞ্চলে টংক অন্দোলন শুরু হয়েছিল, সে আন্দোলনের মূলনেতৃত্বে ছিলেন কমরেড মণিসিংহ। ১৯৪৬ সালে তিনি দ্বিতীয় দফায় টংক আন্দোলন শুরু করেন। অবশেষে ১৯৫০ টংক ও জমিদারী প্রথার বিলুপ্তি ঘটে। ১৯৭১ সালের মুজিব নগর সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৯০ খ্রীস্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর তিনি দেহত্যাগ করেন।
(২) যোগেন্দ্রনাথ তর্কবেদান্ত সংখ্যাতীর্থ মহামহোপাধ্যায় :(১৮৮৪-১৯৬০) তিনি ছিলেন অধ্যাপক সংস্কৃতশাস্ত্র বিশেষজ্ঞ পন্ডিত ও লেখক। ন্যায়শাস্ত্রের উপর ‘তর্কতীর্থ’ এবং পরে সাংখ্যা ও বেদান্ত শাস্ত্রের উপর সংখ্যতীর্থ ও ‘বেদান্ততীর্থ’ উপাধি লাভ করেন। ১৯১০-১৪ খ্রীঃ জাতীয় শিক্ষাপরিষদের এবং ১৯১৪-২০ খ্রীঃ গুরুকূল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেদান্তের অধ্যাপক ছিলেন। ১৯২১ খ্রীঃ তিনি কলকাতা সংস্কৃতি কলেজের অধ্যাপক হন। ১৯৪২ খ্রীঃ অবসর গ্রহণ করে আবার কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেদান্তের অধ্যাপক হিসেবে যোগদেন। ১৯৫০ খ্রীঃ পুনরায় সংস্কৃত কলেজের গবেষণা শাখার দর্শন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক নিযুক্ত হন। ১৯৩২ খ্রীঃ মহামহোপাধ্যায় এবং ১৯৫৭ খ্রীঃ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ‘ডি.লি.ট’ উপাধি লাভ করেন। তার রচিত গন্থগুলো বিশ্বমঙ্গল, প্রাচীন ভারতের দন্ডবিধি (১৯৪৯) জন্মানুসারে বর্ণ ব্যবস্থা, ভারতীয় দর্শনের সমন্বয়, ভারতীয় দর্শনের বিচারনীতি (১৯৫১) ইত্যাদি।
(৪) কুমুদীনি হাজং :কুমুদীনি হাজং এর স্বামী লংকেশ্বর হাজং ছিলেন টংক আন্দোলনের মাঠ পর্যায়ের একজন নেতা। সেই সুবাদে কুমুদীনি হাজংও টংক আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে কাজ করতেন। ৩১ জানুয়রী ১৯৪৬ খ্রীঃ লংকেশ্বর হাজং এর বাড়ীতে পুলিশ বাহিনীর একটি দল লংকেশ্বর হাজং কে গ্রেফতার করার উদ্দেশ্য অবরোধ করে। কিন্তু লংকেশ্বর হাজংকে না পেয়ে তার স্ত্রী কুমুদীনিকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল। এই খবর শুনে বহেরাতলী গ্রামের শতাধিক হাজং নর- নারী সশস্ত্র হয়ে কুমুদীনিকে উদ্ধর করতে পুলিশদের অবরোধ করে। মহিলা আত্মরা সমিতির নেত্রী রাশিমণি দা দিয়ে কোপিয়ে দু’জন পুলিশকে হত্যা করে। পুলিশ এক পর্যায়েগুলি চালায়। এতে পুলিশের গুলিতে রাশিমণি শহীদ হন। সংজ্ঞাহীন কুমুদীনিকে বহেরাতলীর অদূরেই আড়াপাড়া অরণ্যে কউমিনিষ্ট পার্টির নেতা মণিসিংহের গোপন আন্থানায় স্থানান্তর করা হয়। কুমুদীনির জ্ঞান ফিরে আসলে তাকে পুলিশের অত্যাচার ও গ্রেফতার এড়াতে ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট থানায় স্বরস্বতী নামে আত্মগোপন করে লক্ষ্মীকুড়া গ্রামে বলেশ্বর হাজং এর বাড়ীতে আশ্রয় নিতে হয়। সেখানে তিনি দীর্ঘদিন ফেরারী জীবন অতিবাহিত করেন। সে কারনে ভারতের অনেক গ্রন্থে কুমুদীনিকে স্বরস্বতী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
(৫)জালাল উদ্দিন তালুকদার :দুর্গাপুর উপজেলার গুজিরকোনা গ্রামে জালাল উদ্দিনের জন্ম। তিনি সুসঙ্গ ডিগ্রী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাপাশ করেন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি একজন সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ১৯৭৯ খ্রীঃ অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনের কয়েক দিন পর ২১ মার্চ দুস্কৃতিকারীদের নিক্ষিপ্তহাত বোমায় তার দু’টি পা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। শেষ পর্যন্ত দু’টি পা হাটুর উপর কেটে ফেলতে হয়েছে। ১৯৮৬ ও ১৯৯৬ খ্রীঃ অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
(৬) বিভা সাংমা :দুর্গাপুর উপজেলার বিরিশিরি গ্রামে বিভা সাংমা ১মার্চ ১৯৩৫ খ্রীঃ জন্ম করেন। তার প্রাথমিক শিক্ষাবিরিশিরি মিশন স্কুলে। ১৯৫১ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন কলিকাতার সেন্ট মার্গারেট স্কুল থেকে। অতঃপর বিরিশিরি প্রাইমারী টির্চাস ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে ট্রেনিং গ্রহণ করে মিশন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ১৯৫৬ সালে প্রাইভেট পরীক্ষাদিয়ে আই,এ এবং ১৯৬২ সালে বি,এ পাশ করেন। পরে ময়মনসিংহ শিক প্রশিক্ষন (মহিলা ও পুরুষ) মহাবিদ্যালয় থেকে ১৯৬৪ এবং ১৯৬৫ সালে যথাক্রমে বি.এড ও এম.এড ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর তিনি বিরিশিরি প্রাইমারী ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে শিকতা করেন। ১৯৬৭ খ্রীঃ তিনি আবার বিরিশিরি জুনিয়র গার্লস হাই স্কুলকে পুনাঙ্গ হাইস্কুরে উন্নীত করে প্রধান শিক্ষিকাহিসেবে দশ বছর বিদ্যালয়টি পরিচালনা করেন। ১৯৭৭ সালে বিরিশিরিতে সরকারী ভাবে “উপজাতীয় কালচারাল একাডেমী” স্থাপিত হলে তিনি এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক নিযুক্ত হন। বর্তমানে অবসর জীবন যাপন করছেন।
(৭) আক্তারুজ্জামান খান :দুর্গাপুর উপজেলার বিশ্বনাথপুর গ্রামে আক্তারুজ্জামান খানের জন্ম। তিনি প্রথম জীবনে দুর্গাপুর সাবরেজিস্ট্রারী অফিসে দলিল লিখক হিসেবে কাজ করেতেন। সালিশ বোর্ড গঠন হওয়ার পর তিনি সালিশ বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এর পর তিনি এম.এল.এ (মেম্বার অব লেজিসলেটিভ এসেম্বলী তদানীন্তন পূর্ব বাংলা) নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি সমাজ কল্যাণমুলক বিভিন্ন কাজ কর্মে তৎপর থাকতেন।
(৮) ডাঃ অয় কুমার সাহা:দুর্গাপুর উপজেলার ঝাঞ্জাইল বাজারে ডাঃ অয় কুমার সাহার জন্ম। তিনি উচ্চ শিক্ষারজন্য রাশিয়া গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তিনি খনিজ বিদ্যার উপরে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি একজন বিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুর পূর্বে তার সমস্ত সম্পত্তি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দান করে গেছেন।
(৯) আব্দুল খালেক :দুর্গাপুর উপজেলার চন্ডিগড় গ্রামে আব্দুল খালেক এর জন্ম।। তিনি চন্ডিগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও পরে তিনি এম.এল.এ (মেম্বার অব লেজিসলেটিভ এসেম্বলী, তদানীন্তন পূর্ব বাংলা) নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার বাড়ীর সংলগ্নই চন্ডিগড় উচ্চ বিদ্যালয়টি তিনি প্রতিষ্ঠা করেন। তাছাড়াও তিনি অনেক সমাজ কল্যাণ মূলক কাজ করেছেন।
(১০) আহম্মদ হোসেন খান :দুর্গাপুর উপজেলার ঝাঞ্জাইল গ্রামে আহম্মদ হোসেন খান জন্ম গ্রহন করেন। তিনি ১৯২১ খ্রীস্টাব্দে পূর্বধলা জগৎমণি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৩২৫ বঙ্গাব্দে তিনি জারিয়া ইসলামীয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা শিক ছিলেন। । তিনি দীর্ঘদিন ময়মনসিংহের জজ কোর্টের জুরি বোর্ডের সদস্য ছিলেন। আহম্মদ হোসেন খান আইয়ুব সরকারের শাসনামলে বিনা প্রতিদ্বদ্ধিতায় কাকৈরগড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি সমাজ সেবা মূলক অনেক কাজে প্রশংসনীয় ভুমিকা রেখেছিলেন।
(১১) এম.এ. করিম আব্বাসী : দুর্গাপুর উপজেলার বাকলজোড়া গ্রামে ১৫ ডিসেম্বর ১৯৩৮ খ্রীঃ তাঁর জন্ম। তিনি আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সদস্য ছিলেন। আঞ্জুমান হাই স্কুল নেত্রকোণা থেকে মাধ্যমিক (১৯৫৭), নেত্রকোণা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (১৯৫৯), আনন্দমোহন কলেজ থেকে বি.এ(১৯৬২), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে এম.এ (১৯৬৪) ডিগ্রী অর্জন করেন। কর্ম জীবনে ময়মনসিংহ মিন্টু কলেজ (১৯৬৯) এবং সুসঙ্গ দুর্গাপুর ডিগ্রী কলেজে (১৯৭০-৭৫) অধ্যাপনা করেন। ১৯৭৮ খ্রীঃ থেকে আইন পেশায় যোগ দেন। তিনি ৫ম, ৬ষ্ট ও ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। ৫ম ও ৬ষ্ট জাতীয় সংসদের হুইপের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
(১২) আবুল হোসেন মুন্সী (রঃ):বিশ্বনাথপুর, দুর্গাপুর। বিশিষ্ট আলেম ও সমাজ সংস্কারক । তিনি দুর্গাপুর উপজেলার বিশ্বনাথপুর গ্রামের ধনাঢ্য পরিবারে করে শ্বশুরালয়ে বসবাস করতেন। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। আবুল হোসেন মুন্সী সব সময়ই সমাজ সেবা ও সমাজ সংস্কার মূলককাজে জড়িত থাকতেন। তিনি ১৩৫৬ বঙ্গাব্দে লক্ষ্মীপুর “এশায়াতুল উলুম” মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। তার জীবনের শেষ পর্যন্ত উক্ত মাদ্রাসায় ধর্মীয় তালিমে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি অত্র এলাকায় ইসলামী শিক্ষাপ্রসারে অকান্ত পরিশ্রম করেছেন সারা জীবন।
(১৩) মোহাম্মদ আলী সিদ্দীকী :সুসঙ্গ দুর্গাপুর উপজেলার বিরিশিরি গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি ছিলেন গারো উপজাতীয় সম্প্রদায়ের সদস্য । পরবর্তীতে তিনি ইসলাম ধর্মে দীতি হয়েছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় অবস্থান করেন। তিনি সুগায়ক ও খ্যাতিমান বেতার শিল্পী। তার অনেক গান জনপ্রিয়তার র্শীষে উঠেছিল।
(১৪) দিবা লোক সিংহ :সুসঙ্গ দুর্গাপুর। তিনি বিশিষ্ট চিকিৎসক ও সংগঠক । মাতা অনিমা সিংহ , পিতা- বিখ্যাত কমিউনিষ্ট নেতা কমরেড মণিসিংহ। সচনভ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় রাশিয়া থেকে এম.ডি (১৯৮৪) । দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডি.এস.কে), ৫/৮ স্যার সৈয়দ রোড, মোহাম্মদপুর ঢাকা এর নির্বাহী পরিচালক।
লিখেছেন: আলীআহাম্মদখানআইয়োব।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস